জরায়ু বা প্রধানত জরায়ুমুখের (Cervix) পরীক্ষার জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে। এই পরীক্ষাগুলো মূলত জরায়ুমুখের ক্যান্সার এবং এর পূর্বাবস্থা নির্ণয়ের জন্য করা হয়, যা সঠিক সময়ে ধরা পড়লে সহজে চিকিৎসা করা সম্ভব।
প্যাপ স্মেয়ার (Pap Smear) বা প্যাপ টেস্ট
পদ্ধতি: প্যাপ টেস্ট হল জরায়ুমুখের কোষ পরীক্ষার একটি সহজ ও দ্রুত পদ্ধতি। একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী পেলভিক পরীক্ষার সময় একটি বিশেষ যন্ত্র (স্পেকুলাম) ব্যবহার করে জরায়ুমুখটি দৃশ্যমান করেন। এরপর একটি ছোট ব্রাশ বা কাঠি দিয়ে জরায়ুমুখ থেকে সামান্য কিছু কোষের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
পরীক্ষা: সংগৃহীত কোষের নমুনা বিশ্লেষণের জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। এই পরীক্ষায় কোষের এমন কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায় যা ভবিষ্যতে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।
পরবর্তী ধাপ: যদি ফলাফলে অস্বাভাবিক কোষ পাওয়া যায় (যেমন CIN বা ক্যান্সারের পূর্বাবস্থা), তবে আরও বিশদ পরীক্ষার (যেমন কলপোস্কপি বা বায়োপসি) প্রয়োজন হতে পারে।
ভায়া টেস্ট (VIA Test) - ভিজ্যুয়াল ইন্সপেকশন উইথ অ্যাসিটিক অ্যাসিড
পদ্ধতি: ভায়া টেস্ট হলো প্যাপ টেস্টের একটি সহজ এবং কম খরচের বিকল্প। এই পরীক্ষায় জরায়ুমুখে ৫% অ্যাসিটিক অ্যাসিডের (ভিনিগার) দ্রবণ লাগানো হয়।
পর্যবেক্ষণ: অ্যাসিটিক অ্যাসিড লাগানোর কিছুক্ষণ পর খালি চোখে জরায়ুমুখ পর্যবেক্ষণ করা হয়। যদি কোনো অস্বাভাবিক বা প্রাক-ক্যান্সারজনিত পরিবর্তন থাকে, তবে সেই অংশটি সাদা হয়ে যায়, যা দেখে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
কলপোস্কপি (Colposcopy) এবং বায়োপসি (Biopsy)
কলপোস্কপি: এটি একটি বিশদ পরীক্ষা। অস্বাভাবিক প্যাপ টেস্ট বা ভায়া টেস্টের ফলাফলের পরে এটি করা হয়। কলপোস্কপ নামক একটি বিশেষ ক্যামেরা বা বিবর্ধক যন্ত্রের সাহায্যে জরায়ুমুখ ও যোনিপথ অতি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
বায়োপসি: কলপোস্কপির সময় যদি কোনো স্থান অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক মনে হয়, তবে যন্ত্রের সাহায্যে চিমটি দিয়ে সেখান থেকে কোষ কলার (Tissue) একটি ছোট নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। একে বায়োপসি বলা হয়। বায়োপসির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে পরিবর্তনটি ক্যান্সার বা অন্য কোনো সমস্যা কিনা।
এইচপিভি টেস্টিং (HPV Testing)
পদ্ধতি: এই পরীক্ষাটি প্যাপ স্মেয়ারের সাথে ব্যবহার করা যেতে পারে। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) এর উচ্চ-ঝুঁকির স্ট্রেন আছে কিনা, যা সার্ভিকাল বা জরায়ুমুখের ক্যান্সারের প্রধান কারণ, তা নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
নিয়মিত এই পরীক্ষাগুলো করানো জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রাথমিক অবস্থাতেই রোগ নির্ণয় হলে এর চিকিৎসা ও নিরাময় শতভাগ সম্ভব।